
ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা
তরুণরা সক্রিয় থাকলে কোনো সমস্যাই অমীমাংসিত থাকবে না
- আপলোড সময় : ১৬-০৯-২০২৫ ০৬:০০:২৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-০৯-২০২৫ ০৬:০০:২৩ অপরাহ্ন


তরুণরা সক্রিয় থাকলে দেশের কোনো সমস্যাই আর অমীমাংসিত থাকতে পারে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমি যুবসমাজের প্রত্যেক সদস্যকে আহ্বান জানাই, তোমাদের মেধা, শক্তি ও সৃজনশীলতা দিয়ে সমাজের ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখো। তোমাদের সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত অর্জনে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যদের জন্যও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হোক।
গতকাল সোমবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া সচিব মাহবুব আলম।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ আমরা তারুণ্যের শক্তিকে উদযাপন করছি। এটিই আমাদের জাতির চালিকাশক্তি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যখন একটি দেশের যুবসমাজ সক্রিয় থাকে, উদ্যমী ও উদ্ভাবনী শক্তিতে বলীয়ান হয়, তখন কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি আজ কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই। তরুণরা স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সুরক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই তরুণরাই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তরুণরাই যুগে যুগে ইতিহাস রচনা করেছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের চলার পথে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, কখনো তা জনস্বাস্থ্যের সংকট, কখনো শিক্ষার অপর্যাপ্ত সুযোগ, আর কখনো পরিবেশগত বিপর্যয়। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং এগুলোকে আমাদের নিজস্ব শক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আমি আশা করি এ কাজেও আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দেবে।
স্বেচ্ছাসেবা কেবল আর্তমানবতার কল্যাণেই সীমাবদ্ধ নয় জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি আত্ম-উন্নয়ন, চরিত্র গঠন এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের এক আদর্শ মাধ্যম। আমাদের তরুণেরা কেবল স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই থেমে থাকবে না; সমাজের নীতি নির্ধারক, উদ্ভাবক এবং পরিবর্তনের স্থপতি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরবে। এটি তখনই সম্ভব হবে যখন তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে, প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করবে এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে মনোযোগী হবে। আজকের এই পুরস্কার কেবল একটি স্বীকৃতি নয়, এটি তোমাদের জন্য একটি উদাত্ত আহ্বান, তোমরা আরও সাহসী হও, আরও নেতৃত্ব দাও এবং সমাজের কল্যাণে নতুন ধারণা ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করো। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। স্বাস্থ্যখাতে তোমাদের একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ হাজারো শিশুকে রোগমুক্ত রাখতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তোমাদের সামান্য প্রচেষ্টা দেশের শিক্ষার মানকে বহুদূর এগিয়ে নিতে পারে। পরিবেশ রক্ষায় তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী নিশ্চিত করতে পারে। মনে রাখবে, তোমাদের প্রতিটি ছোট ছোট প্রচেষ্টাই দেশের জন্য মস্ত বড় অর্জনের পথ তৈরি করবে, বলেন প্রধান উপদেষ্টা। স্বেচ্ছাসেবা বা যেকোনো মহৎ উদ্যোগের পথ মসৃণ নয় জানিয়ে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সময়, অর্থ এবং মানসিক চাপের বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এর মধ্য দিয়েই আমাদের ধৈর্য, সহনশীলতা এবং নেতৃত্বের মতো মহৎ গুণাবলি অর্জন করে নিতে হবে। আমরা তোমাদের নতুন নীতি, যুগান্তকারী ধারণা এবং সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে দেখতে চাই। তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশ একটি উন্নত, মানবিক এবং উদ্ভাবনী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
এরআগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত ১২ তরুণকে পাঁচটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়া হয়। তারমধ্যে আফঈদা পেয়েছেন ক্রীড়া ক্যাটাগরিতে। কলা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে পুরস্কার পেয়েছেন বান্দরবানের উছাই মং মার্মা (ধুংরী হেডমন)। পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া ফেসুবকে এক পোস্টে আফঈদা জানিয়েছেন, এই পুরস্কার শুধু আমার নয়—এটি সেই সকল তরুণের, যারা সমাজে পরিবর্তন আনার স্বপ্ন দেখে এবং প্রতিদিন নিবেদিত প্রাণে কাজ করে যাচ্ছে।’ তিন ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,আমার পরিবার, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সকল ভালোবাসার মানুষের অবিরাম দোয়া ও অনুপ্রেরণা ছাড়া এ সাফল্য কখনো সম্ভব হতো না। বিশেষ ধন্যবাদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে, তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন-যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান: বগুড়ার সুরাইয়া ফারহানা রেশমা, মাগুরার মো. আক্কাচ খান ও নোয়াখালীর মো. জাকির হোসেন। শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি: ঝালকাঠির মো. খালেদ সাইফুল্লাহ ও গাইবান্ধার মো. শাহাদাৎ হোসেন। দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতা: পাবনার মো. দ্বীপ মাহবুব ও রাজশাহীর হাসান শেখ। আদর্শ সেবা/সমাজকল্যাণ: লালমনিরহাটের মো. জামাল হোসেন, কক্সবাজারের নুরুল আবছার ও রাজশাহীর মো. মুহিন (মোহনা)। ক্রীড়া, কলা ও সংস্কৃতি: সাতক্ষীরার আফঈদা খন্দকার ও বান্দরবানের উছাই মং মার্মা (ধুংরী হেডমন)।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ